তোমরা অষ্টম শ্রেণিতে আলোর প্রতিসরণ এবং তার বাস্তব প্রয়োগ দেখেছ। আমরা জানি, আলোক রশ্মি কোনো স্বচ্ছ ও সমসত্ব মাধ্যমে সবসময় সরলরেখায় চলে। আলো যখন একটি স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমে লম্বভাবে আপতিত না হয়ে বাঁকাভাবে আপতিত হয়, তখন মাধ্যম দুটির বিভেদতলে এর পতিপথের দিক পাল্টে যায়। আলোক রশ্মির দিক পরিবর্তন করার এই ঘটনাই হলো আলোর প্রতিসরণ।
চিত্র ৫.০৪: আলোর প্রতিসরণ
৫.০৪ চিত্রটি লক্ষ কর। এখানে উপরে বাতাস এবং নিচে পানি কল্পনা করা হয়েছে।
আলোকরশ্মি A থেকে শুরু করে O বিন্দুতে পড়েছে অর্থাৎ AD আপতিত রশ্মি এবং বিন্দু হলো আপতন বিন্দু। O বিন্দুর ভিতর দিয়ে NN' লম্ব আঁকা হয়েছে। প্রথম মাধ্যম বাতাস এবং দ্বিতীয় মাধ্যমটি পানি হওয়ায় এবং পানির ঘনত্ব বাতাস থেকে বেশি হওয়ায় আলোকরশ্মি সোজা OB পথে না গিয়ে ON'- এর দিকে সরে এসে OC বরাবর যাবে। এখানে OC হচ্ছে প্রতিসরিত রশ্মি।ZAON হলো আপতন কোণ এবং ZCON' হলো প্রতিসরণ কোণ। এখানে উল্লেখ্য, আলোক রশ্মি AC বরাবর আপতিত না হয়ে NO বরাবর আপতিত হতো তাহলে কিন্তু এটি সোজা ON' বরাবর চলে যেত।
কাজ: একটি কাপে একটি মুদ্রা রেখে তুমি তোমার মাথাটা এমনভাবে সরিয়ে নাও যেন মুদ্রাটি আর দেখা না যায়। এবারে কাপে পানি ঢালতে থাকো, তুমি এক সময় মুদ্রাটি দেখতে পাবে। শূন্য কাপে আলো সোজাসুজি তোমার চোখে আসতে না পারলেও পানি থাকার কারণে বাঁকা হয়ে সেটি তোমার চোখে পৌঁছাতে পারে।
প্রতিসরণের সূত্র: আলোর প্রতিসরণের সময় এর রশ্মির চলাচলের ধর্মকে দুটি সূত্রে প্রকাশ করা যায়।
১. আপতিত রশ্মি, আপতন বিন্দুতে বিভেদ তলের ওপর আঁকা অভিলম্ব এবং প্রতিসরিত রশ্মি একই সমতলে থাকে ।
২. এক জোড়া নির্দিষ্ট মাধ্যম এবং নির্দিষ্ট রঙের আলোর জন্য আপতন কোণের সাইন (sine) ও প্রতিসরণ কোণের সাইনের (sine') অনুপাত সর্বদাই ধ্রুব থাকে। অর্থাৎ sine / (sine') - n
দ্বিতীয় সূত্রে n হিসেবে যে খুব সংখ্যাটির কথা বলা হয়েছে, সেটি হলো নির্দিষ্ট রঙের জন্য প্রথম মাধ্যমের সাপেক্ষে দ্বিতীর মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক। প্রথম মাধ্যমকে শূন্য ধরে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক মাপা হলে সেটাকে বস্তুর প্রতিসরাঙ্ক বলা হয়। পানির প্রতিসরাঙ্ক ১.৩৩, বাতাসের প্রতিসরাঙ্ক ১-এর এত কাছাকাছি যে সেটাকে ১ ধরা হয়ে থাকে। তবে মনে রেখো, আলোর রং ভিন্ন বলে প্রতিসরাঙ্কের মানও একটুখানি ভিন্ন হয়।
চিত্র ৫.০৫: উত্তল লেন্স এবং তার ফোকাস বিন্দু
Read more